ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং বলতে কী বোঝো?

আপনারা কি ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
আপনি আমাদের লেখা এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং বিষয়ে জানতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং বলতে কি বুঝিঃ

আউটসোর্সিং সংশ্লিষ্ট ওপর জনপ্রিয় শব্দটি হলো ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। এ ধরনের পেশাজীবীকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সার রা চাকরিজীবীদের মতো বেতনভুক্ত নয় বরং কাজ ও চুক্তির ওপর নির্ভর করে তাদের আয়ের পরিমাণ কম বা অনেক বেশি হতে পারে। 

তবে এই পেশায় স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছেমতো ইনকামের সুযোগও আছে। আধুনিক যুগে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো ইন্টারনেট মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে ফ্রিল্যান্সার গন ঘরে বসেই তাদের কাজ করে উপার্জন করতে পারেন। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী এবং অনেক চাকুরীজীবী এ পেশায় আসছেন।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এখন একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। 

আউটসোর্সিং শিল্পকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষিত বিরাট জনগোষ্ঠী এখন অর্থ উপার্জন করতে পারছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর আউটসোর্সিং হতে কয়েক মিলিয়ন ডলার আয় করে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই এই শিল্পকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও অনেকে এ খাতে বিনিয়োগ করছেন। 

ফলে বহু লোক সম্পৃক্ত হচ্ছে বিভিন্ন কাজে, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। গ্লোবাল আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস বা জব শেয়ারিং ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রিল্যান্সার (আপওয়ার্ক,বিলেন্সার ফাইবার) ইত্যাদি।
তবে আউটসোর্সিং পেশাটি এখনো স্থায়ী ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত নয়।এখানে কাজ পাওয়ার ওপর অর্থ উপার্জন নির্ভর করে।

ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো আপাতত দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলো পরিবার বিচ্ছিন্নতা তথা ভিন্নধর্মী জীবন যাপন এ কাজের বড় ধরনের একটি নেতিবাচক দিক।আউটসোর্সিং এর সকল কাজ যেহেতু অনলাইন নির্ভর তাই এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে এমন নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া দুরুহ। 

এছাড়াও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নানা ফ্লডিং ও স্প্যামিং এর যন্ত্রণা এড়িয়ে যথাযোগ্য কাজ পাওয়া যেমন কঠিন,তার চেয়েও কঠিন সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পারিশ্রমিক পাওয়া। সর্বোপরি রাত জেগে কাজ করা, দক্ষতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া,কাজের যোগান দেওয়ার বাধ্যবাধকতা জনিত মানসিক চাপ, সরবরাহকৃত কাজ যথাযথভাবে মূল্যহিত না হওয়া বা পারিশ্রমিক পরিশোধের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতার কারণে অনেকেই এই ধরনের কাজে নিরু উৎসাহিত বোধ করে থাকেন।

ফ্রিল্যান্সিং সাইটের নাম সমুহঃ

  • ফ্রিল্যান্সার ডট কমঃ(freelancer.com) এটি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ উপার্জনের জন্য নির্ভরযোগ্য একটি ওয়েবসাইট তথা ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস। ২০০৯সালে সাইটটি যাত্রা শুরু করে। এখানে যে কেউ তার নিজের যোগ্যতা অনুসারে প্রোফাইল তৈরি করে অনলাইনের বায়ারদের পোস্টকৃত বিভিন্ন কাজের জন্য বিডের মাধ্যমে বিভিন্ন আউটসোর্সিং এর কাজ পেতে পারে। এখানে কাজের জন্য অসংখ্য ক্যাটাগরি রয়েছে এবং এর পেমেন্ট সিস্টেমও যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং এর কাজে নিয়োজিতদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এই কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন ম্যাট বেরি এবং এর কার্যালয় বর্তমানে ম্যানিলা, সিডনি, ব্রিটিশ৷ ৷৷ কলম্বিয়া,লন্ডন,কানাডা,জাকারর্তায় রয়েছে।
  • আপওয়ার্ক ডট কম(upwork.com): এটি অনলাইনে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের আরেকটি ওয়েবসাইট এর পূর্ব নাম ছিল অডেস্ক,যার নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে upwork.com নামটি গ্রহন করেছে।অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মতই এখানে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের প্রোফাইল বিডের ভিত্তিতে কাজ পেতে পারে। এদের পেমেন্ট সিস্টেম বেশ নিরাপদ, তবে এখানে ঘন্টা ভিত্তিক কাজে অর্থের নিশ্চয়তা বেশি পাওয়া যায়। সাইটটি গ্রীক পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এখন দাপটের সঙ্গে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে তাদের অধিপত্য বজায় রেখেছ।
  • বিল্যান্সার ডট কম(belancer.com): এটি বাংলাদেশী একটি বিড ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং সাইট। ২০১৫সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলকের আগ্রহ ও সরকারি সহযোগিতায় সাইট টি ডেভলপ করা হয়েছে।এর উদ্দোক্তা মোঃ শফিউল আলম।
  • ফাইভার ডট কম(fiverr.com): ফাইভার ফ্রিল্যান্সার জন্য একটি মার্কেট প্লেস।২০১০ সালে ইসরাইলের একটি কোম্পানি এটি প্রতিস্ঠা করে।ফাইভার হলো এমন একটি ওয়েবসাইট, যেখানে যে কোনো কাজকে বিক্রয়ের জন্য আপলোড করা যায়।ফাইভার এ কোনো কিছু বিক্রি করতে হলে তার বিষয়ে একটি গিগ(gig)তৈরি করতে হবে।বিক্রির জন্য ফাইভার যে কোনো কাজের মূল্য হলো ৫ডলার। কাজটি বিক্রয় হলে ফাইভার কেটে নিবে ১ডলার ফলে কর্মী পাবেন।ইত্যাদি আরও ওয়েবসাইট রয়েছে ফ্রিল্যান্সার এর জন্য অনলাইন ইনকাম এর।

আউটসোর্সিং বলতে কি বুঝি?

প্রচলিত ব্যবস্থায় কোন কর্মীকে স্ব শরীরে কর্মস্থলে গিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বিশ্বের যে কোন দেশের যেকোনো কর্মী অন্য যেকোনো দেশের কর্ম দাতার কাজ ঘরে বসেই করতে পারেন এবং তার কাজের পেমেন্ট অনলাইনে গ্রহণ করতে পারেন। ফুল টাইম বা পার্টটাইম যেকোনো ধরনের হাজার হাজার কাজ রয়েছে অনলাইনে। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ার ও ওয়ার্কারগণ একই প্লাটফর্মে উপনীত হচ্ছেন। 

অনলাইন মার্কেটপ্লেসের হাজার হাজার কাজ থেকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোন কাজ খুঁজে নেয়া এবং সেটি সম্পাদন করার পর বায়ারের কাছ থেকে তার পেমেন্ট গ্রহণ করার মাধ্যমে যে উন্মুক্ত পেশা বা ফ্রিল্যান্সিং কাজের সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে আউটসোর্সিং বলে। এর মাধ্যমে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ বৈদসিক মুদ্রা। 

জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেসিং এর। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইসিটি এনাবল্ড সার্ভিসকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করছে বিপুল পরিমাণ বৈদসিক মুদ্রা। শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয়, এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে দেশের বিপুলসংখ্যক প্রশিক্ষিত বেকার দক্ষ জনগোষ্ঠীর।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url