তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আপনারা কি তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম। তুলসী পাতা একটি ওষুধি গাছ যা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের অনেক রোগ দূর হয়ে থাকে।


তুলসী পাতা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার উপকারিতা পাশাপাশি আরো বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন।

ভূমিকাঃ 

তুলসী পাতা যেমন আমাদের উপকার করে থাকে তেমন আমাদের ক্ষতিও করে থাকে। তুলসী গাছ আমরা ওষুধি গুণ সম্পন্ন গাছ হিসেবেই চিনে থাকি। তুলসী পাতা ছোট থেকে শুরু করে বড়দেরও ব্যাপক উপকার করে থাকে। এক কথায় তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম তবে তুলসী পাতা অতিরিক্ত সেবনে আমাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তুলসী পাতা খেতে কিছুটা ঝাঁঝালো। 

তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রত্যেকটি বাড়িতে অন্তত একটি তুলসী পাতার গাছ রোপন করা উচিত। তুলসী পাতা খাওয়ার অনেক নিয়ম রয়েছে। মানুষ বিভিন্নভাবে তুলসী পাতা খেয়ে থাকে। তবে আমাদেরকে সদা তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে।

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়মঃ

তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদের পাতা। তুলসী পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যা। কয়েকটি তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম নিচে দেওয়া হলো।
  • প্রথমে একটি কিংবা দুটি তুলসীপাতা, ২ চামচ মধুর সাথে আধা চামচ হলুদের গুড়া, পরিমাণ মতো লং পেপার, আধা চিমটি কালো গোল মরিচ এই সকল কিছু একসঙ্গে মিশ্রণ করে যে রস পাওয়া যাবে সেই প্রতিদিন ৫ মিলি করে দিনে তিনবার খাওয়া যায়। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি রস। তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আরো নিচে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
  • আবার তুলসী পাতা দিয়ে চা খাওয়া যায়। তুলসীপাতা চা বানাতে হলে কদমে তুলসী পাতা ভালোভাবে ধৌত করে নিতে হবে। তারপর আদা ও চা পাতা ফুটিয়ে লেবু এবং মধু মিশিয়ে তাতে দুই তিনটা তুলসী পাতা দিয়ে মিশ্রণ করতে হবে। এটি তুলসী পাতা দিয়ে চা বানানোর উপায় যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী হয়।
  • এছাড়াও তুলসী পাতা যদি আমরা রোদে শুকিয়ে রাখি তাহলে তা প্রতিদিন কিছু কিছু পরিমাণ মতো খেতে পারি যার শরীরের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় আমরা অনেক কাশি করতে থাকি। এই সময় আমরা তুলসী পাতা গাছ থেকে ছিড়ে পানি দিয়ে ধুয়ে তা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারি।

তুলসী পাতার উপকারিতাঃ

  • যারা গলা ব্যথা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাদের জন্য তুলসী পাতা হতে পারে একটি উত্তম মাধ্যম কারণ তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে গলা ব্যথা দূর হয়ে থাকে।
  • তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে যায়।
  • বর্তমানে অনেক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার খুবই মারাত্মক একটি রোগ যা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়ে দিতে পারে। তুলসী পাতায় থাকা রেডিওপ্রটেকটিভ টিউমারের পোস্টগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।
  • আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পরি। কিন্তু তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। যেকোনো ক্ষতস্থান খুবই তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে।
  • যারা অতিরিক্ত মোটা পান নিয়ে ভোগেন তাদের জন্য তুলসী পাতা হতে পারে একটি উত্তম মাধ্যম। তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে শরীরের ওজন কমে যায়। এর ফলে যারা অতিরিক্ত মোটা শরীর নিয়ে ভুগছেন তারা অতি সহজে মোটা থেকে চিকন হতে পারবে।
  • তুলসী পাতা ডায়াবেটিস দূর করতে সাহায্য করে। এক কথায় বলতে গেলে তুলসী পাতা ডায়াবেটিসের ওষুধ বলা যায়।
  • তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদি কখনো সর্দি কাশি হয় তখন তুলসী পাতা খাওয়া উচিত।
  • তুলসী পাতা এমন একটি পাতা যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
  • তুলসী পাতা ক্ষার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়। এটি শরীরের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • আমরা অনেক সময় নানা রকম সমস্যার শিকার হই। তুলসী পাতা পেটের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি পাতা। ইত্যাদি আরও তুলসী পাতার উপকারিতা রয়েছে।

তুলসী পাতার অপকারিতাঃ

  • তুলসী পাতার যেমন অপকারিতা রয়েছে তেমন আবার অপকারিতাও রয়েছে। তুলসী পাতার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য ভালো হলেও অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে।
  • তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী নারীর ভ্রুনেরসমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে মানুষের শরীরে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
  • তুলসী পাতা মানুষের শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় ফেলে এর ফলে যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তারা যদি ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে সাথে তুলসী পাতা কিংবা তুলসী পাতার চা খেয়ে থাকে তাহলে তার শরীরের জন্য ব্যাপক ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে।
  • তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি, প্রোস্টেট, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে। যার শরীরের জন্য একটি ক্ষতিকর দিক।
  • আবার এটি বংশবৃদ্ধিকারী হরমোনেরও ক্ষতি করে থাকে। তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে হরমোনের কার্যকারিতা দুর্বল করে ফেলে।
  • তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রক্তের ঘনত্ব হ্রাস পায়। যারা রক্ত পাতলা করার জন্য ইতিমধ্যে ওষুধ খাচ্ছেন এবং পাশাপাশি তুলসী পাতাও খাচ্ছেন তাদেরকে তুলসী পাতা হতে বিরত থাকাই ভালো। এটি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে।
  • তুলসী পাতা একবারে চিবিয়ে খাওয়া উচিত নয়। কারণ তুলসী পাতায় থাকা লৌহ দাঁতের নানা রকম দাগ করে ফেলে। এটি দেখতে খুবই বাজে লাগে। এজন্য হালকা চিবানোর পর তা গিলে খাওয়া উচিত বা একবারে গিলে খেলে আরো ভালো।

তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতাঃ

তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। তুলসী পাতা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে অনেক উপকার হয়ে থাকে। তুলসী পাতা বিভিন্ন রোগের সমাধান করে থাকে। মানুষ বিভিন্নভাবে তুলসী পাতা সেবন করে তবে তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

তুলসী গাছ একটি ওষুধি গুনাগুন সম্পন্ন একটি গাছ যে গাছের পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে নানা রকম উপকার করে থাকে। তুলসী পাতায় রয়েছে লৌহ যা আমাদের দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটির মাধ্যমে দাঁতের ব্যাপক দাগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও তুলসী পাতায় রয়েছে এসিডিক যা মুখের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকে। আমাদের উচিত তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়মঃ

তুলসী পাতার খাওয়ার নিয়ম অনেক থাকলেও শিশুদের ক্ষেত্রে তা আলাদা। সাধারণত বড়দের তুলনায় ছোটরাই অর্থাৎ শিশুরাই তুলসী পাতা বেশি খেয়ে থাকে। শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম গুলো হলো-
  • প্রথমে এক টুকরো আদা ও কিছু তুলসী পাতা ভালোভাবে পিষে নিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুইবার পেস্ট অবস্থায় খাওয়াতে হবে।
  • এরপর তুলসী পাতার সাথে আদা এবং মধু মিশিয়েও খাওয়ানো যায়।
  • তুলসী পাতা খাওয়ার অনেক নিয়মের মধ্যে পানি গরম করে তাতে তুলসীপাতা, চিনি, আদা, মিশেও খাওয়া যায়।
  • এছাড়াও তুলসী পাতা সাথে চিনি কিংবা মিশিয়ে তার শিশুদেরকে সরাসরি চিবিয়েও খাওয়ানো যায়।

তুলসী পাতার চায়ের উপকারিতাঃ

  • তুলসী পাতার উপকারিতা গুলির মধ্যে তুলসী পাতার চা অনেক উপকার করে। বর্তমানে অনেক মানুষ তুলসী পাতার চা খেয়ে থাকেন। তুলসী পাতার চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো-
  • প্রথমে তুলসী পাতার চা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের সর্দি কাশি,জ্বর দূর হয়।
  • তুলসী পাতার চায়ে অনেক গুনাগুন থাকায় এটির কারণে গলা ব্যাথা সহ ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
  • তুলসী পাতা চায়ের কারনে শরীরের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকে যা ডায়াবেটিসের মতন রোগ হতে রক্ষা করে থাকে।
  • যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভোগেন কিংবা দুচিন্তায় ভোগে তারা নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেতে পারেন। এটি মানুষের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দূর করে থাকে।
  • এছাড়াও তুলসী পাতা চায়ের মাধ্যমে মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হয়ে থাকে।
  • এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের মুখের স্বাস্থ্য ভালো না। এ ধরনের মানুষের উচিত নিয়মিত তুলসী পাতার চা খাওয়া। কারণ তুলসী পাতা চায়ের মাধ্যমে মুখের স্বাস্থ্য অনেক ভালো হতে থাকে।

লেখকের শেষ কথাঃ 

আমরা এতক্ষণ তুলসী পাতার উপকারিতার পাশাপাশি তুলসী পাতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। তুলসী পাতা আমাদের উপকার করে থাকলেও এটি কিন্তু আমাদের ক্ষতিও করে থাকে। তাই অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। সাধারণত তুলসী পাতা সর্দি-কাশি,জ্বর কিংবা গলা ব্যাথা হলে মানুষ বেশি খেয়ে থাকে। তুলসীপাতা শিশু হতে যুবক কিংবা বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষই খেতে পারে।

পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পাশে থাকতে ভুলবেন না। আপনাদের সাপোর্ট আমাকে অনুপ্রেরিত করবে আরো ভালো পোস্ট এবং সঠিক তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url