পেট ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আপনারা কি পেট ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। পেট ব্যথা খুবই যন্ত্রদায়ক। পেট ব্যথা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। পেট ব্যথা দূর করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে যা মেনে চললে আমরা পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারবো।


পেট ব্যথা কমানোর উপায়সহ পেট ব্যথার আরও তথ্য জানতে আমাদের লেখা এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন। আশা করি আপনি পেট ব্যথা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

ভূমিকাঃ

পেট ব্যথা মানুষ এর জীবনের জন্য একটি সাধারণ হলেও পেট ব্যথা বেড়ে গেলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। পেট ব্যথা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। বেশির ভাগ সময় পেটে গ্যাস হওয়ার কারনে মূলত পেট ব্যথা হয়। কিন্তু শুধু পেটে গ্যাস পেট ব্যথার মুল কারণ না। বিভিন্ন রোগের কারনেও পেট ব্যথা হতে পারে। পেট ব্যথা শুরু হলে মানুষ এর প্রচুর কষ্ট হয়ে থাকে। 

তারা কোন কিছুতে শান্তি পায় না। কোন কিছু খেতেও তাদের ভালো লাগে না। আমরা প্রায় পেট ব্যথার কারনে অনেক ওষুধ খেয়ে কিন্তু সেই ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের আবার অনেক অসুবিধাও হতে পারে। তাই পেট ব্যথা কমানোর উপায় গুলো মেনে আমাদের কে পেট ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি পেট ব্যথার পরিমাণ অনেক থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করতে হবে।

পেট ব্যথা কি কি কারনে হয়ঃ

পেট ব্যথা মানুষ এর বিভিন্ন কারনে হতে পারে। পেট ব্যথা মূলত ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস এর কারনেও হতে পারে। যেসব কারনে পেট ব্যথা হতে পারে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-
পেট ব্যথার কারণঃ
  • পেট ব্যথা গ্যস এর কারনে হতে পারে। মানুষ এর পেটে যখন গ্যস হয়, তখন এই গ্যস এর কারনে মানুষ এর পেট ব্যথা বেড়ে যায়।
  • অনেক সময় আমরা খাওয়া দাওয়া করলে বদহজম হয়ে থাকে। এই বদহজম পেট ব্যথার অন্যতম একটি কারণ।
  • অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারনে পেট ব্যথা হয়ে থাকে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের পেটে ব্যাকটেরিয়া জেতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীর এর জন্য ক্ষতিকর।
  • আবার অনেক সময় বিভিন্ন ভাইরাস আক্রমনের কারনে পেট ব্যথা শুরু হয়ে থাকে। আমরা যেসব খাবার খাই সেগুলো খাবার ভালো করে না ধুলে আমাদের শরীরে আক্রমন করবে। এর ফলে পেট ব্যথা শুরু হবে।
  • অনেক সময় আলসারজনিত সমস্যার কারনে প্রচুর পেট ব্যথা করে।তাছাড়াও ডাইভার্টিকুলাইটিস এর কারনেও প্রচুর পেট ব্যথা হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় তৈলাক্ত খাবার বেশি খেয়ে নিলে পেটে সমস্যা হয়। এর কারনে পেট ব্যথা করে। আমাদের উচিত খাবারে তেল কম পরিমাণে ব্যবহার করা। তৈলাক্ত খাবার খেলে আবার ওজনও বৃদ্ধি পায়।
  • আবার আমরা যখন বাহিরের ভাজা পোড়া বেশি খাবো তখন পেট ব্যথা হতে পারে। কারনে বাহিরের ভাজাপোড়া খাবারে প্রচুর ময়লা থাকে আর তাছাড়াও এগুলো বেশি তেলে ভাজা হয়ে থাকে।
  • বাসি, পচা খাবার খাওয়ার মাদ্ধমেও আমাদের পেট ব্যথা হতে পারে। পেট ব্যথা একটি সাধারণ ব্যথা মনে হলেও আসলে তা না। পেট ব্যথা অনেক রকমের রয়েছে। পুরো পোষ্টটি পড়তে থাকুন আসতে আসতে আপনার সকল উত্তর পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্।

পেট ব্যথা কমানোর উপায়ঃ

পেট ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। আমাদের কে অবশ্যই পেট ব্যথা কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা এখন পেট ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানবো-
আদা চাঃ পেট ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আদা চা খেতে হবে। আদা চা খাওয়ার মাধ্যমে পেট ব্যথা কমানো যায়।
  • লেবু চাঃ আদা চা এর মত লেবু চাও পেট ব্যথা কমানোর জন্য ভালো ভুমিকা পালন করে থাকে। পেট ব্যথা হলে আমাদের কে লেবু চা খেতে হবে।
  • পানি পান করাঃ আমরা যদি আমাদের পেট ব্যথা কমাতে চাই তাহলে আমাদের কে প্রচুর পানি খেতে হবে। পানি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের পেট ব্যথা অনেকটা কমে যায়।
  • কাঁচা কলা খাওয়াঃ পেট ব্যথা কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কাঁচা কলা তরকারির সাথে খাওয়া। কাঁচা কলা পেট ব্যথা কমানোর হাতিয়ার।
  • ক্যামোমিল চাঃ ক্যামোমিল চা খাওয়ার ফলে আমাদের পেট ব্যথা কমে যায়। বেশির ভাগ মানুষ এই চা এর কথা জানে না তবে এমন কিছু মানুষ আছে যারা পেট ব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত ক্যামোমিল চা খেয়ে থাকে।
  • দই খাওয়াঃ দই খাওয়ার মাধ্যমে পেট ব্যথা কমা শুরু করে। দই খেলে পেট ব্যথা কমানো যায়।
  • ওষুধ খাওয়াঃ যদি বেশি পরিমাণ এর পেট ব্যথা করে তাহলে দ্রুত ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খেতে হবে।
  • ইনো খাওয়াঃ বেশির ভাগ সময় পেট ব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে গ্যস। তাই আমাদের পেট ব্যথা কমানোর জন্য এক প্যাকেট ইনো খেয়ে নেওয়া উচিত হবে।

পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়ঃ

এতক্ষন পেট ব্যথা দূর করানর অনেক উপায় সম্পর্কে জানতে পারলাম। এখন আমরা জানবো পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
  • তুলসীঃ তুলসী পাতা আমাদের পেটের অ্যাসিডের পরিমাণ হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের উচিত পেট ব্যথা কমানোর জন্য তুলসী পাতা খাওয়া। বা তুলসী পাতার চা খাওয়া।
  • আদা খাওয়াঃ আদাতে পাওয়া যায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি। এর গুনাগুন ব্যথা কমাতে ভালো ভুমিকা পালন করে থাকে। যেহুতু আদা বাসা বাড়িতে প্রায় সময় থাকে, সেহুতু পেট ব্যথা কমানোর জন্য বাসায় আদা খেতে হবে। আদা চায়ের মাদ্ধমেও খেতে পারেন। আবার কাঁচাও খেতে পারেন।
  • আপেল সাইডার ভিনিগারঃ এটি খাওয়ার মাধ্যমে শরীর এর হজম শক্তি বেড়ে যায়। তাছাড়াও এটি ব্যথা দূর করা জন্য ভালো ভুমিকা পালন করে থাকে।
  • মৌরিঃ মৌরি আমাদের পেটের ব্যথা এবং গ্যাস এর সমস্যা দূর করে থাকে। অনেকেই মৌরি ব্যবহার করে থাকে পেটের ব্যথা কমানোর জন্য।
  • চালের পানিঃ চালের পানি পেটের ব্যথা কমিয়ে থাকে। বাসা বাড়িতে কারোর পেটের সমস্যা হলে চালের পানি খাওয়াতে হবে। এটি পেট ব্যথা অনেকটা কমিয়ে থাকে।
  • জিরা পানিঃ পেট ব্যথা কমানোর আর একটি ঘরোয়া উপায় হলো জিরা পানি খাওয়া। জিরা পানি খাওয়ার ফলে পেটের গ্যাস এর সমস্যা থেকে পেট ব্যথা দূর হয়ে থাকে।
  • গরম পানির সেঁকঃ পেট ব্যথা করলে গরম পানির সেঁক পেটে দিতে হবে। এর ফলে পেট ব্যথা অনেকটা সেরে উঠবে।

বাচ্চাদের পেট ব্যথা কেন হয়ঃ

বাচ্চাদের পেট ব্যথা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। শিশুরা বাহিরের অনেক খাবার খেয়ে থাকে। যেমন- চিপস, জুস, চকলেট ইত্যাদি। এগুলো খাবারে ব্যাকটেরিয়া থাকার কারনে শিশুদের পেট ব্যথা হয়ে থাকে। তাছাড়াও শিশুদের শারিরিক অসুস্থটা থাকলে পেট ব্যথা হয়ে থাকে। শিশু জন্য যে তাদের পেটে গ্যস হবে না এমনটা না। 

শিশুদের ক্ষেত্রেও গ্যাস এর ফলে পেট ব্যথা হতে পারে। তাছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ পেটে কৃমির সমস্যা হয়ে থাকে। কৃমির কারনে পেটে প্রচুর ব্যথা হয়। বাচ্চাদের অনেক কষ্ট হয়ে থাকে। তাছাড়াও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবে সংক্রমণ এবং বয়সন্ধিকালের মত সমস্যার কারনেও পেট ব্যথা হতে পারে। 

পেট ব্যথা দূর করতে বাচ্চাদের কে ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। বাসায় রান্না করার সময় শাকসবজি, চাল, মাছ, মাংস ভালো করে ধৌত করে নিতে হবে। বাচ্চাদের পেট ব্যথা হলে এরা বড়দের তুলনায় ব্যথা বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না। পেট ব্যথা অনেক সময় অনেক বড় কোন কারনের জন্যও হতে পারে। তারমদ্ধে অ্যাপেন্ডিক্স এর ব্যথা মারাত্মক।
পেট ব্যথা কমানোর দোয়াঃ
পেট ব্যথা কম করতে আমাদের ইসলাম ধর্মে দোয়া রয়েছে। এই দোয়া করলে পরম করুনাময় আল্লাহ তা'য়ালা পেট ব্যথা দূর করে দেয়। পেট ব্যথা দূর করার দোয়া হলো-
আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন, যে জায়গায় ব্যথা থাকবে সেই জায়গায় ডান হাত রেখে তিনবার বিস্মিল্লাহ বলে নিচের দোয়াটি সাতবার পড়তে হবে।
"আউজু বি ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু"।
এই দোয়াটির বাংলা অর্থ হলো- আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।

পেট ব্যাথা কমানোর ঔষধঃ

পেট ব্যথা কমানোর অনেক ওষুধ রয়েছে। বর্তমানে মানুষ পেট ব্যথা কমাতে ওষুধ এর ব্যবহার বেশি করে থাকে। তবে অনেক সময় এই ওষুধ সেবনের কারনে শরীর এর অনেক সমস্যা হতে পারে। কয়েকটি পেট ব্যথা কমানোর ওষুধ এর নাম সম্পর্কে জেনে নিন-
  • রেনিটিডিন ট্যাবলেটঃ এটি পেট ব্যথা কমাতে ভালো অবদান রাখে।
  • লোসেকটিল ক্যাপসুলঃ লোসেকটিল ক্যাপসুল প্রায় মানুষ পেট ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে।
  • ওমিপ্রাজল ২০ মি.লিঃ এটি পেটের গ্যস সহ আলসার এর সমস্যা দূর করে থাকে। পেট ব্যথা কমাতে ওমিপ্রাজল ২০ মি.লিও মানুষ ব্যবহার করে থাকে।
  • আলজিন ৫০ এম জিঃ আলজিন ৫০ এম জি পেট ব্যথা কমানোর জন্য ৩ বেলায় ব্যবহার করা যায় তাছাড়াও এটির কার্যকারিতাও অনেক। ইত্যাদি।

তলপেটে ব্যথার কারণঃ

পেট ব্যথার কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। এখন আমরা তলপেটের ব্যথার কারণ সম্পর্কে জানতে পারবো-
  • অনেক সময় কোলন ক্যান্সার এর কারনে তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। তলপেটের ব্যথা অন্যান্য ব্যথা হতে অনেক যন্ত্রদায়ক।
  • আবার লিভারে ক্যান্সার এর কারনেও তলপেটে অনেক ব্যথা হয়ে থাকে।
  • মহিলাদের মাসিক এর সময় তলপেটে প্রচুর ব্যথা হয়ে থাকে। মেয়েদের জীবনে মাসিক এর ব্যথার কষ্ট অনেক।
  • অ্যাপেন্ডিক্স এর কারনেও তলপেটে প্রচুর ব্যথা হয়ে থাকে।
  • আবার অনেক সময় মূত্রনালিতে ইনফেকশন বা ব্যাকটেরিয়ার কারনে তলপেটে প্রচুর ব্যথা হয়ে থাকে। ইত্যাদি।
  • অনেক সময় খাবার এ সমস্যা থাকার কারনেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম এর কারনেও তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
  • মেয়েদের ডিম্বস্ফোটনের ক্ষেত্রেও তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
  • আবার অন্ত্রে প্রদাহ জনিত সমস্যার কারনেও তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে।

লেখকের শেষ কথাঃ

পেট ব্যথা আমদের কে অনেক সমস্যায় ফেলে। আমাদের উচিত সবসময় পরিস্কার খাবার খাওয়া। তেল জাতীয় খাবার বাদ দেওয়াই ভালো। যদি তেল জাতীয় খাবার ছাড়া থাকতে না পারেন তাহলে তেল জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। সব সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। অন্তত ৩ মাস পর পর ডাক্তার এর কাছ থেকে নিজের শরীর চেক আপ করে নিবেন। এতে বোঝা যাবে আপনার শরীর ঠিক আছে কিনা। পেট ব্যথা দূর করতে পেট ব্যথা দূর করার উপায় গুলো ভালো ভাবে আর একবার পরে নিন।

আমাদের লেখা এই পোষ্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে পাশে থাকবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url