বেল খাওয়ার উপকারিতা ও বেলের জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন



আপনারা কি বেল খাওয়ার উপকারিতা ও বেলের জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। বেল একটি পুষ্টিকর ফল যেটি আমাদের অনেক উপকার করে থাকে।

বেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের লেখা এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।

ভুমিকাঃ

বেল একটি অতি পরিচিত একটি ফল। বেল দেখতে আকারে গোলাকার হয়ে থাকে। এটি শক্ত খোলস দ্বারা বর্ধিত থাকে। এই খোলস এর ভেতরের অংশ অনেক নরম হয়ে থাকে। মূলত এই নরম অংশটিকেই ফল ধরা হয়। বেলের জাত অনুযায়ি বেল বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।বেল অতি সুস্বাদু একটি ফল। 

বেলের কাঠ অনেক শক্তিশালী হওয়ার কারনে এটি বিভিন্ন ফার্নিচার বানাতে নেওয়া হয়। বেলের শরবত মানুষ বেশি খেয়ে থাকে। বিশেষ করে ইফতারের সময় মানুষ বেলের শরবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে। পাশাপাশি বেলের পাতার রস আমাদের কে বিভিন্ন ভাবে উপকৃত করে থাকে।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতাঃ

খালি পেটে বেল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বেলের বিভিন্ন জাত রয়েছে। বেল খেতে ভারি মজা লাগে। এখন আমরা খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো-
  • রক্ত পরিষ্কার রাখেঃ আমরা যদি বেলের মৌসুমে নিয়মিত খালি পেটে বেল খেতে পারি তাহলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিস্কার থাকবে। বেল আমাদের শরীরের রক্ত পরিস্কারে ভালো ভুমিকা পালন করে থাকে।
  • এনার্জি বৃদ্ধিঃ খালি পেটে বেল খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের এনার্জি বাড়ে। আমাদের উচিত খালি পেটে বেলের শরবত খাওয়া।
  • ডায়রিয়া থেকে রক্ষাঃ আমরা অনেক সময় ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। এর ফলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। আমাদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পরে। এই সময় যদি খালি পেটে বেল খাওয়া যায় তাহলে ডায়রিয়া কমে আসে। তাই ডায়রিয়া হলে খালি পেটে বেল খেতে পারেন।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধঃ বেলে প্রচুর পুষ্টি থাকে। যদি আমরা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে নিয়মিত বেল খেতে হবে। বেল খাওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সার হওয়ার আসংখা কমে যায়।
  • অস্বস্তি থেকে রক্ষাঃ খালি পেটে বেল খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের অস্বস্তি ভাব দূর হয়ে যায়। মনে স্বস্তি ফিরে আসে। তখন সব কিছুতে মন বসে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ঃ খালি পেটে বেল খাওয়ার ফলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়ে থাকে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত বেল খাওয়া উচিত।

পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতাঃ

বেল খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের অনেক উপকার হয়ে থাকলেও বেশি পরিমাণ এর পাকা বেল খেলে এটি আমাদের জন্য অনেক ক্ষতি হতে পারে। এখন আমরা পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানবো-
  • যৌনশক্তি হ্রাসঃ অতিরিক্ত পরিমাণে যদি আমরা পাকা বেল খেয়ে থাকি তাহলে এটি আমাদের যৌনশক্তি কমিয়ে ফেলতে পারে। তাই অতিরিক্ত পাকা বেল খাওয়া হতে দূরে থাকাই আমাদের জন্য ভালো হবে।
  • গ্যসের সমস্যাঃ গ্যসের সমস্যা হলে খুবই অস্বস্তি লাগে। চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমানের বেল খেলে আমাদের গ্যস সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের কে আমাদের চাহিদা অনুযায়ি বেল খেতে হবে।
  • হৃদ্যয়ে ছিদ্র হতে পারেঃ অতিরিক্ত বেল খাওয়ার ফলে আমাদের অন্তরের বা হৃদয়ে ছিদ্র দেখা দিতে পারে। তাই পাকা বেল বেশি খাওয়া হতে সাবধান থাকাই ভালো হবে।
  • ডায়াবেটিসঃ বেল খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হলেও অতিরিক্ত পাকা বেল খেলে ডায়াবেটিস বাড়তে পারে। অনেক সময় জটিল সমস্যাও হতে পারে।
  • পেট ব্যথাঃ বেশি পাকা বেল খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা শুরু হতে পারে। পেট ব্যথা খুব যন্ত্রদায়ক হয়ে থাকে। অনেক সময় পেট ব্যথা অনেক বড় আকার ধারন করতে পারে।
  • দুর্গন্ধ বায়ুঃ অনেক সময় অতিরিক্ত পাকা বেল খেলে পেটে দুর্গন্ধ বায়ু হতে পারে।
তাই আমাদের উচিত বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে তারপর বেল খাওয়া। কারণ বেল খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। বেলের জাত অনেক রয়েছে। বিভিন্এন জায়গার বেল বিভিন্ন রকম হতে পারে শুধু মাত্র বেলের জাতের কারনে। এখন থেকে বেল খাওয়ার সময় অবশ্যই সাবধান থাকবেন। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ভালো কোন ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

পাকা বেল খাওয়ার নিয়মঃ

পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম অনেক রয়েছে। বিভিন্ন বেলের জাতের কারনে বেলের স্বাদ এর পরিবর্তন থাকতে পারে। তবে সকল বেলের জাত খাওয়ার নিয়ম এক। জাত ভেদে বেল আকারে ছোট কিংবা বড় হতে পারে। এখন আমরা পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো-
  • পানি হিসেবে খেতে পারেনঃ যদি আপনি পাকা বেল খেতে চান তাহলে এক গ্লাস পাকা বেলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়াও এভাবে খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে তাৎক্ষনিকভাবে এনার্জি বৃদ্ধি পায়।
  • সকালে খেতে পারেনঃ প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পাকা বেলের শরবত খেতে পারেন।
  • শরবত বানিয়েঃ আপনি যদি পাকা বেলের শরবত বানাতে চান, তাহলে পাকা বেলের রস বানানর সময় বেলের মধ্যে মধু কিংবা গুর মিশাতে পারেন, তারপর ভালো করে পেস্ট বানিয়ে সরাসরি খেয়ে নিতে পারেন।
  • বীর্যের ঘনত্ব বাড়ানোঃ আপনি যদি বীর্যের ঘনত্ব বাড়াতে চান তাহলে আপনি পাকা বেলের রস এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে বীর্যের ঘনত্ব বাড়াতে ভালো ভুমিকা রাখে।
  • ইফতার এর সময়ঃ আপনি রোজার মাসে ইফতার এর সময় পাকা বেলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এর ফলে সারাদিন রোজা থাকার পর সবকিছু ফ্রেস লাগা শুরু করবে।
  • গরমে শরবতঃ অতিরিক্ত গরম এর সময় পাকা বেলের শরবত খেতে পারেন। এর ফলে গরম এর সময় আপনাকে ডিহাইড্রেশন এর হাত থেকে রক্ষা করে থাকবে।

বেলের জাতঃ

বেল একটি পুষ্টিকর এবং উপকারী ফল হিসেবে আমরা চিনে থাকি। বাংলাদেশে বেল সেইভাবে চাষ না হলেও বেলের বহুবিধ ব্যবহার এবং পুষ্টিগুণ রয়েছে। বেলের বিভিন্ন জাত রয়েছে যা বিভিন্ন ওজনের হয়ে থাকে। যেমন ৫০০ গ্রাম থেকে ২০ কেজি ওজনের বেলও হতে পারে। বেলের জাত গুলো দেখে নিন-
  • বারি বেল-১ ।
  • বেঙ্গল কুইন্স (Bengal quince)
  • গোল্ডেন অ্যাপল (Golden apple)
  • জাপানিজ বিটার অরেঞ্জ (Japanese bitter orange)
  • স্টোন অ্যাপল (Stone apple)
  • উড অ্যাপল (Wood apple)
এই জাতগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আবহাওয়ায় বিভিন্ন ফলন দিয়ে থাকে। বেলের পুষ্টি গুন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে সাধারনত একটি জাতের বেলই পাওয়া যায়।

বেল কোন মাসে পাকেঃ

বেল সাধারণত আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে পেকে থাকে। বেল খেতে ভারি মজা হয়ে থাকে। বেল মানুষ শরবত হিসেবে বেশি খেয়ে থাকে এবং বেলের গাছ কে বিভিন্ন ফার্নিচার বানাতে কাজে লাগানো যায়।

বেলের শরবত খাওয়ার নিয়মঃ

  • বেল প্রস্তুতিকরনঃ পাকা বেল প্রথমে নিতে হবে। তারপর পাকা বেলটিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর বেলের শক্ত খোলস ভেঙে নিয়ে ভেতরে থাকা শাঁস বের করতে হবে এবং বীজ ও আঁশ ফেলে দিতে হবে।
  • শরবত তৈরি করাঃ বেলের যে শাঁস থাকবে তা পানির সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি বড় ছাঁকনিতে মিশিয়ে নেওয়া বেলের আঁশটি ছেঁকে নিতে হবে।
  • মিষ্টি করাঃ তারপর ছাঁকা শরবতের মধ্যে চিনি অথবা মধু মিশিয়ে নিতে হবে। আবার আঁখের গুর বা একটু লবণও মিশিয়ে নিতে পারেন।
  • পরিবেশন করুনঃ ফ্রিজে থাকা বরফ কুচি শরবতের মধ্যে দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন। গরমে বা ইফতারে বেলের শরবত খুবই উপকারি আমাদের শরীরের জন্য।

বেল পাতা খেলে কি হয়ঃ

বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম অনেক রকম রয়েছে। মানুষ বিভিন্ন কারনে বেল পাতার রস খেয়ে থাকে। বেলের জাত অনুযায়ী আবার বেলের স্বাদ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এখন আমরা বেল পাতা খেলে কি হয় সেটি সম্পর্কে জানবো-
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ বেল পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়ে থাকে। শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান খুব দ্রুত সেরে উঠে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ বেল পাতার রস ইনসুলিন ও গ্লুকোজের লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেল পাতার রস খুবই উপকারি।
  • ভিটামিন সি সরবরাহঃ বেল পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে বেল পাতা ভিটামিন সি সরবরাহ করে থাকে।
  • রক্তের কোলেস্টেরল কমায়ঃ বেল পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে থাকে।
  • পেটের সমস্যাঃ পেটের সমস্যা দূর করতে বেল পাতার ভুমিকা অপরিসীম। আমাদের উচিত বেল পাতার রস খাওয়া।
তবে আমাদের জেনে রাখা উচিত অতিরিক্ত বেল পাতার রস খেলে আমাদের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত চাহিদা অনুযায়ী বেল পাতার রস খাওয়া।

লেখকের শেষ কথাঃ

বেল বিভিন্নভাবে আমাদের উপকার করে থাকলেও অতিরিক্ত বেল খেলে বাহ বেলের পাতার রস খেলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। বেলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে তাই আমাদের কে নিয়মিত বেল খেতে হবে কিন্তু তা পরিমাণ অনুযায়ি।

আমাদের পোষ্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করে পাশে থাকবেন। আপনাদের সাপোর্ট আমাদেরকে অনুপ্রেরিত করবে সদা সঠিক তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url