স্যালাইন খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আপনারা কি স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। স্যালাইন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। স্যালাইন আমাদেরকে অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।


স্যালাইন খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের লেখা এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পড়তে থাকুন। ইনশা-আল্লাহ আপনি স্যালাইন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

ভুমিকাঃ

স্যালাইন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন, ওর স্যালাইন, টেসটি স্যালাইন, রাইস স্যালাইন, কিংবা শরীরের ভেতর প্রবেশ করানো লিকুইড স্যালাইন। স্যালাইন আমাদের কে সবচেয়ে বড় ডায়রিয়া অ পানিশূন্যতা রোগ হতে বাঁচাতে পারে। স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা আমাদের জন্য আসলেই বড় অবদান রাখে।
তাছাড়াও স্যালাইন এর কারনে দুর্বল শরীর চাঙ্গা হতে খুবই উপকারি। চলুন আর দেরি না করে স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম, স্যালাইন খেলে কি গ্যাস হয়? স্যালাইন খাওয়ার ১০টি উপকারিতা, কিংবা স্যালাইন খাওয়ার অপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় কোন স্যালাইন খাওয়া যাবে? এসন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি।

স্যালাইন খাওয়ার নিয়মঃ

খাবার স্যালাইন কিংবা ওরস্যালাইন বলতে আমরা বুঝে থাকি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন্য পানীয়। স্যালাইন মূলত ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতার হাত থেকে আমাদের কে রক্ষা করে থাকে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। খাবার স্যালাইন খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যা আমাদেরকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা থাকার কারনে ডাক্তাররা স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। চলুন খাবার স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-
  1. স্যালাইন প্রস্তুতিকরণঃ
  • প্রথমে আমাদের কে ২৫০ মি.লি খাবার স্যালাইন প্রস্তুত করতে হলে ২৫০ মি.লি বিশুদ্ধ পানি নিতে হবে।
  • তারপর স্যালাইন এর প্যাকেট হতে সম্পূর্ণ স্যালাইন ২৫০ মি.লি বিশুদ্ধ পানিতে ধেলে দিতে হবে।
  • সবশেষে একটি চামচ দিয়ে স্যালাইন মিশ্রিত পানি ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
    2. স্যালাইন খাওয়ার নিয়মঃ
  • ডায়রিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর রোগীকে ওরস্যালাইন স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
  • যদি রোগীর বয়স ৬মাস থেকে ২ বছর হয় সেই ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ মি.লি পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
  • আবার রোগীর বয়স যদি ২ বছর হতে ১০ বছর হয় তাহলে ১০০ থেকে ২০০ মি.লি পর্যন্ত খাওয়াতে পারবেন।
  • সবশেষে ১০ বছরের বেশি রোগীকে ২০০ মি.লি হতে ৫০০মি.লি খাওয়াতে পারবেন অর্থাৎ দুই গ্লাস।
3.স্যালাইন খাওয়ার কিছু সতর্কতাঃ
  • খাবার স্যালাইন তৈরি হয়ে গেলে তা ৫ ঘণ্টার বেশি রেখে দেওয়া যাবে না। এর ফলে সেটি খাওয়ার উপযুক্ত থাকবে না।
  • স্যালাইন খাওয়া হয়ে পরবর্তীতে আবার চামচ ভালভাবে ধৌত করে স্যালাইন বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে।
  • স্যালাইন খাওয়ানো হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর ফুটানোর প্রয়োজন নেই।
  • ওষুধ খাওয়ার জন্য যেসব ড্রপ পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে শিশুদের কে স্যালাইন খাওয়াতে পারেন।

স্যালাইন খেলে কি গ্যাস হয়ঃ

স্যালাইন একটি পানীয় খাবার। এই খাবারে রয়েছে পানি,  গ্লুকোজ, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম লবণ। এটি আমাদের শরীরের পানিশূন্যতার সমস্যা দূর করে থাকে। এই জন্য আমাদের শরীরে ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা হলে ডাক্তাররা বেশি করে স্যালাইন খেতে বলে। কিন্তু স্যালাইন খেলে গ্যাস হয় এমন কোন কিছু এখন পর্যন্ত বের হয় নাই। 
কিন্তু অনেকে স্যালাইন খাওয়ার পরে পেটে গ্যাস এর সমস্যায় ভুগেন। আসলে এটি মূলত খাদ্যাভ্যাস, অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, বা শরীরের বিশেষ কোন প্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে। তাছাড়া স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। যদি আপনারা বেশি গ্যাস এর সমস্যায় ভুগেন তাহলে দ্রুত ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করতে পারেন।

স্যালাইন খাওয়ার ১০টি উপকারিতাঃ

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। চলুন স্যালাইন খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
  1. পানিশূন্যতা দূর করেঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শিরের পানিশূন্যতা দূর হয়ে থাকে। যাদের পানিশূন্যতা দেখা দেই তাদেরকে খাবার স্যালাইন খাওয়া উচিৎ।
  2. তাৎক্ষনিক শক্তি দেয়ঃ শরীর দুর্বল থাকলে স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে দ্রুত শক্তি আসে।
  3. লবনের ঘাটতি পূরণঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের লবনের ঘাটতি পুরণ হয়ে থাকে।
  4. মাথা ব্যথা দূর হয়ঃ আমাদের যদি কখনো মাথা ব্যথা হয় তাহলে সেইক্ষেত্রে আমরা স্যালাইন খেতে পারি। কারণ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের মাথা ব্যথা দূর হয়ে থাকে।
  5. রক্তচাপ এর মাত্রা ঠিক রাখেঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরের রক্তের মাত্রা ঠিক রাখে। এর ফলে আমাদের রক্তচাপ এর সমস্যা হয় না।
  6. পরিপাক নালী পরিষ্কার রাখেঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরের পরিপাক নালী পরিস্কার রাখে।
  7. জিঙ্ক সাপ্লিমেন্টের সাথে কার্যকরঃ ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে এটি জিঙ্ক সাপ্লিমেন্টের সাথে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
  8. ডিহাইড্রেশন হতে মুক্তি দেয়ঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে স্যালাইন আমাদেরকে  ডিহাইড্রেশন হতে রক্ষা করে থাকে।
  9. ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখেঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  10. গরমে শরীর ঠাণ্ডা থাকেঃ গরমের সময় নিয়মিত স্যালাইন পানি খেলে এটি আমাদের শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।

স্যালাইন খাওয়ার অপকারিতাঃ

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন আবার অতিরিক্ত পরিমানের স্যালাইন খেলে এর আবার অপকারিতাও রয়েছে। চলুন স্যালাইন খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
  • কিডনির সমস্যাঃ অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে এটির মাধ্যমে আমাদের কিডনির সমস্যা হতে পারে। তাই স্যালাইন সবসময় পরিমাণ মতন খাবেন।
  • কোষের পানি শূন্যতাঃ স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের পানি শুন্নতার সমস্যা দূর হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে স্যালাইন খেলে এটি আমাদের শরীরের কোষের পানি শুকিয়ে ফেলতে পারে। তাই অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়া হতে সাবধান থাকাই উত্তম।
  • হাইপারন্যাট্রেমিয়াঃ সেলাইনে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড রক্তে মিশে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে থাকে যা আমাদের হাই ব্লাড প্রেসারে অনেক সমস্যা করে থাকে।
  • লবনের পরিমাণ বৃদ্ধি করেঃ অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের লবনের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় কোন স্যালাইন খাওয়া যাবেঃ

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা যেহুতু রয়েছে সেহুতু গর্ভাবস্থায় স্যালাইন অবশ্যই খাওয়া যাবে। কিন্তু তাই বলে যে পরিমাণ এর চেয়ে বেশি খাবেন তা কিন্তু না। গর্ভাবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ থাকে যেমন ডায়রিয়া, দুর্বলতা, জ্বর, বমি হওয়া তাহলে আপনি ওর স্যালাইন খেতে পারেন। 
তাছাড়াও আপনি টেসটি সেলাইন খেতে পারবেন। স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরের ক্লান্ত ভাব দূর করে থাকে এবং পানিশূন্যতা দূর করা থেকে অনেক উপকার করে থাকে। তাছাড়াও গর্ভাবস্থায় স্যালাইন এর পাশাপাশি ডাবের পানি খেতে পারেন।

লেখকের শেষ কথাঃ

ইতিমধ্যে আপনারা স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা সহ স্যালাইন সম্পর্কে আরও অনেক কিছু বিস্তারিত জানতে পারলেন। স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের উপকার হয়ে থাকলেও ভুলে যাওয়া যাবে না যে অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ার ফলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই স্যালাইন খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিমাণমত খাবেন এবং প্রয়োজনে ডাক্তার এর পরামর্শ নিবেন।

পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করে পাশে থাকবেন। আপনাদের সাপোর্ট আমাদেরকে অনুপ্রেরিত করবে সদা সঠিক তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url